১. রিশান মুগ্ধ চোখে তার সদ্য কেনা অ্যারোকারটি দেখছিল। সে অনেকদিন ধরে নিজের লাইফ ক্রেডিট জমিয়ে কষ্ট করে তার অতি পছন্দের অ্যারোকারটি কিনেছে। এটি কেনার জন্য তার প্রায় ৬ মাস মস্তিষ্কের আনন্দের অনুভুতি কেনার থেকে বিরত থাকতে হয়েছে, প্রাকৃতিক খাবারের স্বাদ নেওয়া হয়নি প্রায় ২ বছর। ৩১৩২ সালের পৃথিবীতে প্রাকৃতিক খাবারের দাম খুবই বেশি। জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রাকৃতিক খাবারের স্বাদ নেবার সামর্থ্য হয় না। আজ রিশান তার নতুন অ্যারোকারটিতে চড়ে লিমিনার বাড়িতে যাবে। তার অ্যারোকারটি দেখে লিমিনা কিরকম মুগ্ধ চোখে তাকাবে তা ভেবে সে আনন্দিত। পৃথিবীতে জনসংখ্যা ও যানবাহনের সংখ্যা এতই বেড়ে যায় যে ২৭৮৪ সালের দিকে মানুষ মাটিতে গাড়ি চালানো ছেড়ে দেয়। আকাশপথে এরোপ্লেন ও হেলিকপ্টার এর পাশাপাশি চালু হয় এয়ারবাস ও অ্যারোকার। সাধারণ মানুষেরা যাতায়াতের জন্য ব্যাবহার করে এয়ারবাস। যাদের সামর্থ্য হয় তারা কিনে নেয় অ্যারোকার। পৃথিবীতে এখন আর দেশবিভাগ নেই। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবজাতির অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে, পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় যখন প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের মুখে, তখন পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কিছুসংখ্যক মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে নতুন করে মানবসভ্যতার ইতিহাস তৈরির কাজে হাত দেয়। সেটি ২৯৭৮ সালের গোঁড়ার কথা। এখনও পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ সেই যুদ্ধেরই ধ্বংসস্তূপ। পৃথিবীর অল্প কিছু ভূভাগ জুড়ে এখন মানুষ বসবাস করে। খাবার হিসেবে ব্যাবহার হয় পুনঃ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত প্রোটিন। ফসল ফলানোর জায়গা নেই। তাই প্রাকৃতিক খাবার এত দুর্লভ।
২. রিশান লিমিনার ছোট্ট ফ্ল্যাটটিতে এসেছে। লিমিনা রিশানের নতুন অ্যারোকারটি দেখে খুশি হলেও হঠাৎ খানিকটা বিমর্ষ হয়ে রিশানকে প্রশ্ন করে, 'অনেকগুলো লাইফ ক্রেডিট খরচ হয়ে গেল, তাইনা?' রিশান কিছু বলে না, আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে জীবজগতকে রক্ষার জন্য সূক্ষ্ম পর্দা দ্বারা আবৃত হাল্কা সবুজ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আসলে লিমিনার বিমর্ষ হওয়ার কারন, রিশান আর লিমিনা মিলে ঠিক করে রেখেছিলো সামনের বছর তারা বিয়ে করবে। বিয়ের লাইসেন্স কিনতে অনেক লাইফ ক্রেডিট লাগবে। তারা কষ্ট করে লাইফ ক্রেডিট জমাচ্ছিল কিন্তু রিশানের অ্যারোকার কেনার ফলে অনেকগুলো লাইফ ক্রেডিট খরচ হয়ে গেছে। সেইসময় লিমিনার কর্মী রোবট 'হাউসি-৩৪' এসে বলে, 'মহামান্য রিশান ও লিমিনা, খাবার তৈরি। দয়া করে খেতে আসুন।' খাবার শেষে লিমিনা রিশানকে বলে, 'রিশান, আমার খুব বেশি ইচ্ছে করে প্রাকৃতিক জঙ্গলে ঘুরতে, ঝর্ণার পানিতে ভিজতে।' ' প্রাকৃতিক জঙ্গলে বেড়াবার মতন লাইফ ক্রেডিট আমাদের সারা জীবনেও হবে না।' রিশান বলে। লিমিনা আর কিছু বলে না। তার চোখ ঝর্ণার স্রোতে ভেজার স্বপ্নে বিভর। ৩১৩২ সালের পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষেরই স্বপ্ন প্রাকৃতিক জঙ্গলে ঘুরবার, প্রকৃতির কোমল আবেশ পাবার। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই স্বপ্নপূরণ হয় না। কারন এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। নিতান্ত সৌভাগ্যবান ছাড়া প্রাকৃতিক জঙ্গলে বেড়াবার পারমিট কেউ কিনতে পারে না। রিশান ভাবে, আদিমযুগের মানুষেরা তো জঙ্গলে থাকতো, জীবন কাটাত প্রকৃতির স্পর্শে। তাহলে কি আদিম সভ্যতাই মানুষের এই অতি উন্নত সভ্যতার চাইতে উত্তম? এই প্রশ্নের উত্তর সবসময় খুজে বেড়ায় সে। কিন্তু পায় না, কখনো পাবেও না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ
মাসের শেষ সময়ে এসে মনে হলো, অনেক কিছু পড়া বাকী আছে। আর পড়তেই অপঠিত লেখায় ঢুকলাম। সকালটা ঝলমলে হয়ে গেল। খুব চমৎকার লিখেছ ঈশান। অপেক্ষায় রইলাম আরো ফাটাফাটি কিছু একটার জন্য। ধন্যবাদ।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা
তোমার সাথে অ্যারো কারে ঘুরে এলাম ৩১৩২ সালে । এত অল্প বয়সে জটিল একটা বিষয়ে সুন্দর অবতারণা করেছ । মুগ্ধ হলাম । বেশি বেশি পড়তে থাক আরও সুন্দর লিখবে । এই সাইটের সবার লেখা পড় । অনেক শুভকামনা ।
আহমাদ মুকুল
সুন্দর গল্প নিঃসন্দেহে। কল্পনাশক্তি এবং লেখনি সুন্দর। তবে । আ্যারোকার, লাইফ ক্রেডিট- এগুলো কিন্ত বিভিন্ন কল্পকাহিনীতে ব্যবহৃত, ব্যবহারে দোষ নেই, তবে আরো সৃজনশীলতা খাটাতে হবে। গল্পটির জন্য অনেক সাধুবাদ।
আহমেদ সাবের
সুন্দর আইডিয়া। ভবিষ্যৎ যেন চোখের সামনে - পুনঃ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত প্রোটিন, লাইফ ক্রেডিট, প্রাকৃতিক জঙ্গলের দুষ্প্রাপ্যতা। সেই তুলনায় বিয়ের ব্যাপারটা পুরনো লাগল। চমৎকার গল্প। এমন আরও গল্পের জন্য অপেক্ষা করা যায়।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।